মৃত্যুর সময় কি হয়? মৃত্যুর লক্ষন কি কি? কোরআন ও হাদিস থেকে রেফারেন্স সহ।

মৃত্যুর আগে ১২ টি সংকেত, মৃত্যু কি এবং কেন, মৃত্যুর পর প্রাণীদের কি হয়, মৃত্যুর লক্ষণ কি কি, মৃত্যু কি সহজ, মানুষের মৃত্যু কেন হয়, মৃত্যুর সংকেত কি কি, মৃত্যু নিয়ে সমবেদনা,

মৃত্যুর সময় কি হয়

আসসালামুআলাইকুম, মৃত্যুর সময় কি হয়, মৃত্যুর লক্ষন কি কি তাই নিয়ে আজকের আয়োজন।প্রত্যেকটি প্রানীরই এক সময় মৃত্যু ঘটবে। মৃত্যু একটি নিশ্চিত বিষয়। যখন সময় আসবে তখন এক মিনিট আগেও হবে না বা এক মিনিট পড়েও হবে না। বরং মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। মৃত্যুর সময় বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যায় যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে মৃত্যু নিশ্চিত। আমার নিজের কথা নয়। কোরআন মাজিদে ্এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
 

মৃত্যুর আগের ১২টি সংকেত কথা কি ঠিক?

মৃত্যুর আগের ১২টি সংকেত অথবা ৪০ দিন আগে মানুষ মৃত্যু ঠিক পায় এমন অনেক কথা আমাদের সমাজের লোক জনের মুখে মুখে শোনা যায়। কিন্তু এগুলো কতটুকো ঠিক? আসলে এই কথা গুলোর কোন রেফারেন্স নেই।

বরং এগুলো কুসংস্কার হিসেবে আমাদের সমাজে বিরজমান আছে। মৃত্যুর আগের ১২টি সংকেত বা ৪০ দিন আগে মানুষ মৃত্যু ঠিক পায় এগুলো কোন কথার মধ্যেই পারে না। মৃত্যুর ১২ টি সংকেত, মৃত্যু বোঝা যায় এমন কোন কথা নেয় তবে কোরআন মাজিদের আয়াত থেকে মৃত্যুর সময়ের ০৬ টি লক্ষন বর্ণনা করবো।

সূচিপত্র

{tocify}$title={Contents}


মৃত্যুর লক্ষণ কি কি?

মৃত্যুর আগে তেমন কোন লক্ষন নেই, আর থাকবেই বা কিভাবে? এগুলো তো শুধু মাত্র ভবিষৎবাণী মাত্র। আর ভবিষ্যৎবাণী সম সময় সত্য হয় না। তাই আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিতে চাই না বা কাউকে মিথ্যে তথ্যও দিতে চায় না।
  • মানুষ চলতে চলতে পা পিছলে পড়ে মৃত্যু বরণ করতে পারে
  • রাস্তায় হাটার সময় গাড়ীর সাথে দূর্ঘটনা জনিত কারনে মৃত্যু হতে পারে
  • মানুষ ঘুমের মধ্যেও মৃত্যু বরণ করে থাকে
তাই সমাজে যারা মৃত্যুর লক্ষন হিসেবে যেই সমস্ত কথা ছড়াই এগুলো মিথ্যে কথা বৈ কিছু নয়।

কোরআনে বর্ণিত মৃত্যুর কিছু লক্ষন

কোরআনে বর্ণিত মৃত্যুর সময়ের ০৬ টি লক্ষন বর্ণনা করবো। এগুলো মৃত্যুর সময় ঘটে তাই মিথ্যে ভবিষ্যৎবাণী নয়। তাই আমরা ছয়টি ধাপে সুন্দরভাবে এগুলো বর্ণনা করবো।

আরও পড়ুনঃ

১. ইয়ামাউল মাউত বা মৃত্যুর দিন

এই দিন মানুষের জীবনের সমাপ্তি ঘটবে এবং মৃত্যু হবে। হায়াত ফুরিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর ফেরেশতাদের নির্দেশ দিবেন জমিনে গিয়ে তার রুহুকে কবজ করে আনতে। এই দিন সম্পর্কে পৃথিবীর কেউ জানেনা। আর তাই যারা বলে মানুষ মৃত্যুর ৪০ দিন আগে সব বুঝতে পারে তারা মিথ্যে কথা বৈ কিছু বলে না। এটা একটা প্রতিষ্ঠিত ‍কুসংস্কার।

এমনকি কেউ যদি বিকেলে মৃত্যু বরণ করে সেই লোক সকালে এবং বিকেলেও সেই বিষয়ে অবগত হবে না। সময় যখন খুব কাছে চলে আসবে যখন পর্দা সরিয়ে ফেলা হবে তখন শুধু সে জানতে পারবে তার আগে নয়। কাজেই মৃত্যুর আগে ১২টি সংকেত, ১৫টি আলামত ৪০ টি লক্ষন এগুলো সব ভোকাস।

মানুষ তার মৃত্যুর দিন না জানা সত্ত্বেও কিছু শারিরীক পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারবে। মুমিন ব্যাক্তি খুব মনে খুব প্রশান্তি অনুভব করবে এবং সুখ অনুভব করবে। অর্থাৎ জান্নাতি ব্যাক্তি; দুনিয়াই যারা নেককাজ করতো এবং নেককারদের সাথে থাকতো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এমন মৃত্যু দান করুন। আমীন।

আর যারা পাপিষ্ঠ দুনিয়াতে খুব পাপ কাজ করেছে তারা বুকে খুব চাপ অনুভব করতে থাকবে। যেন মনে হবে তাদের বুকের উপর পাহাড় তুলে দেওয়া হয়েছে। এদের কাছেই মূলত আজাবের ফেরেশতা নিয়ে আজরাইল আঃ নাজিল হবেন। আল্লাহ এমন মৃত্যু থেকে আমাদের কে নাজাত দিক। আমীন।

ফেরেশতা নাজিল হওয়ার সময় দুষ্ট জিন এবং শয়তান ফেরেশতাদের দেখতে পারবে। কিন্তু মানুষ দেখতে পারবে না। কারন এখনো তাদের চোখের পর্দা সরে যায় নি।
 
এই দিনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেনঃ

তোমরা সেই দিন-কে ভয় কর যেই দিন তোমাদের কে ফিরিয়ে নেওয়া হবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর প্রতিটি নফসকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে তাদের উপার্যন। আর কারও উপর জুলম করা হবে না। (সূরা বাকারা- ২:২৮১)

২. রুহ কবজ করার ধাপ

এই ধাপে রুহু বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়বে। রুহু হাত, পা পায়ের গোছা নাভী এবং বুকের ওপর হয়ে অর্থাৎ পুরো শরীরের উপরের দিকে কন্ঠনালীর নিচের দুই কাধ পর্যন্ত বিস্তৃত হাড় এর কাছে অবস্থান করবে। এই হাড়দ্বয়কে তারাক্বী বলে। 

এই সময় মানুষ ক্লান্তি ও অস্থিরতা অনুভব করে। অস্থিরতা ও অসহনীয় চাপ অনুভব হয়। কিন্তু মানুষ তখনও জানতে পারে না বা বিশ্বাস করতে চায় না যে, তার রুহু বের হয়ে যাচ্ছে।

৩. তারাক্বী

তারাক্বী বলা হয় কন্ঠনালীর নিচে দুই কাধ পর্যন্ত বিস্তৃত হাড় কে। এখানে মানুষের রুহ এসে পৌছে যাবে। বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ তখনও বিশ্বাস করবে না যে তার মৃত্যু হয়ে যাবে। সে আবার জীবনে ফিরে আসার জন্য আশাবাদী হবে। কিন্তু তার এই আশা আর পূরণ হবে না। আল-কোরআনে এই পরিস্থিতি এভাবে বর্ণনা হয়েছে-

কখনো না, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে, এবং বলা হবে কে ঝাড়বে? এবং সে মনে করবে বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে এবং গোছা গোছার সাথে জড়িত হয়ে যাবে। সেদিন আপনার পালন কর্তার নিকট সবকিছু নীত হবে। (সূরা কিয়ামাত- ২৬-২৫)

এখানে বলা হয়েছে প্রাণ কন্ঠাগত হবে অর্থাৎ তারাক্কী তে পৌছে গেছে। এবং বলা হবে কে ঝাড়বে কথাটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে তখন আত্মীয় স্বজন রা তারাহুরো করবে ব্যস্ত হয়ে যাবে তাকে নিয়ে। তখন তারা বলাবলি করবে কে তাকে সূরা/আল্লাহর কালাম পড়ে ঝাড়বে?

কেউ বলবে ডাক্তার ডাকো তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে। কেউ বলবে ইমারজেন্সিতে কল করো। এক লোক হয়তো উঠে এসে বলবে তাকে কালেমা শাহাদত তাকলিন করাও (অর্থাৎ মনে করাও)। অথবা বলবে কে ভালো সূরা পড়তে পারো সে পড়ে তাকে ঝাড়-ফুক করো। একেই বলা হয়েছে কে ঝাড়বে?

সে মনে করবে বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে- অর্থাৎ সে মনে করবে তার মৃত্যু হয়ে যাবে কিন্তু নিশ্চিত হতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে মানুষ আবার প্রাণে ফিরে আসার আশঙ্কা করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি মানুয়ের মৃত্যু তখন নিশ্চিত।

গোছা গোছার সাথে জড়িত হয়ে যাবে- অর্থাৎ পায়ের এক গোছা অন্য গোছার সাথে জরিয়ে যাবে। তার মৃত্যুর বিষয়টি এখন নিশ্চিত। গোছাদ্বয় এক হয়ে গেছে মানে এটাই তার শেষ দিন। এই অবস্থায় মৃত্যু থেকে কেও পালায়নও করতে পারবে না আবার প্রাণে ফিরেও আসতে পারবে না। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে।

সেদিন আপনার পালন কর্তার নিকট সবকিছু নীত হবে - সেদিন আল্লাহর কাছে রুহু ফিরে যাবে। আল্লাহর কাছেই মানুষ নত হবে। অর্থাৎ তার মৃত্যুর বিষয়টি এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে।

৪. চতুর্থধাপ হুলকউম

মুত্যর কঠিন পর্যায় হলো হুলকউম। এটি মানুষের জন্য অত্বন্ত কঠিন স্তর। মৃত্যুর শেষ স্তর এখান থেকেই শুরু এবং আখিরাতের দর্শন এখান থেকেই শুরু। এই স্তরে মানুষের চোখের পর্দা সরিয়ে নেওয়া হয় এবং মানুষ ফেরেশতা সমূহকে দেখতে পারে। 

এই পর্দার কারনেই আমরা জীবিত অবস্থায় আমাদের আশেপাশের ফেরেস্তাদের দেখতে পারি না। কিন্তু মৃত্যুর সময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের চোখের এই পর্দা সরিয়ে নিবন যার ফলে আমরা মৃত্যুর ফেরেশতাদের কে দেখতে পারবো।

সূরা ক্বফে আল্লাহ তায়ালা বলেন
আমি তোমার সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, এখন তোমার দৃষ্টি প্রখর। (সূরা ক্বাফ- আয়াত নং- ২২)।

আল্লাহ তায়ালা এখন তার পর্দা সরিয়ে নিয়েছে। সে তার চারপাশের ফেরেশতাদের দেখতে পারছে। জীবনে কখনো মানুষ এমন অভিজ্ঞতার সামনাসামনি হয়নি। তাই এটি তার জন্য খুবই কঠিন সময় এবং কঠিন পরিস্থিতি। কিন্তু মানুষ এই অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে কাউকে বলে যেতে পারে না। আর তাই আমাদের সামনে অনেকের মৃত্যু হলেও আমরা মৃত্যু সম্পর্ক-এ বেশিরভাগ মানুষই উদাসীন।

মানুষ এই পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালার কালাম দেখতে পারে এজন্য এই পরিস্থিতির নাম হুলকউম নাম করন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল-কোরআনে এরশাদ করেনঃ

আর যখন প্রাণ কন্ঠাগত হয় তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটর হয়ে থাকি। কিন্তু তোমরা তা দেখতে পাও না (সূরা ওয়াকিয়া- আয়াত নং- ৮৩-৮৫)

মূলত আল্লাহ তায়ালা তার নিকটতর হয় এবং আমাদের চোখের পর্দার কারনে আমরা তা দেখতে পাই না। কিন্তু মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিটি সব স্পষ্ট দেখতে পায়। কারন তার চোখের পর্দা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এজন্যই এই পরিস্থিতির নামকরণ করা হয়েছে হুলকউম।

হয়তো সে আল্লাহ তায়ালার রহমত এবং তার কর্মের পুরুস্কার জান্নাত দেখতে পারছে নয়তো সে দেখতে পারছে আল্লাহ তায়ালার কঠিন আজাব ও গজব।

এই জন্য মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করে তখন সে নির্দিষ্ট কোন একটি দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

৫. মৃত্যুর পঞ্চম ধাপ

রুহ কবজের পরিস্থিতিটা অনেক কঠিন একটা পরিস্থিতি। এই ধাপে মানুষ তার করা সকল আমল দেখতে পায়। তার চোখের সামনে সব ভাসতে থাকে। তার আমল গুলো একে একে তার মনে পড়তে তাকে। এই সময় মানুষ আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি এবং ভীত দেখতে পায়। এই অবস্থায় মৃত্যুর ফেতনা ঘটে যায়।

এই ফেতনাতে শয়তান প্রবেশ করে। শয়তান সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এই সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। অতীত জীবনের যে কোন দিনের চেয়ে শয়তান এই দিনে বেশি শক্তিপ্রয়োগ করে কারন এটিই মানুষের শেষ দিন।

শয়তান এইদিন সবচেয়ে কঠিন আঘাত হানে। আল্লাহর ব্যাপারে নবীর ব্যাপারে এবং দ্বিনের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। এবং এটি এতো কঠিন ফেতনা যে মানুষ সচারচর এই ফেতনায় পতিত হয়ে যায় এবং মৃত্যুর সময় কাফের হয়ে যায়।

শয়তান তার নিকট আত্মীয়র রূপ ধরে তার কাছে আসে যে আগেই ইন্তেকাল করেছে এবং বলে যে আমি তোমার আগেই মৃত্যু বরণ করেছি, আল্লাহ তোমাদের যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তা মিথ্যা (নাউযুবিল্লাহ) তাই তুমি অস্বিকার কর।

এই সময় শয়তান সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে মানুষকে কাফের বানানোর। এবং মানুষ যখন অস্বীকার করে আল্লাহ তায়ালা এবং ইসলাম সম্পর্কে তখন সে পলায়ন করে। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে কোরআনে বলে-

আর তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মতো। যখন সে বলে কুফরি করো এবং মানুষ কুফরি করে তখন সে বলে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক্য নেই। আমি বিশ্বপালন কর্তা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করি। (সূরা হাশর আয়াত নং- ১৬)

নবিজী সাঃ আমাদের কে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। 

হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের শাস্তি থেকে, জাহান্নামের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে।

হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়াটি পাঠ করতেন। (রেফারেন্সঃ সহিহ্ বুখারি শরিফ, হাদিস নং- ১৩৭৭)

এছাড়া দোয়াটি আল-কোরআনেও আছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
বলুন হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি (সুরা মুমিনুন আয়াত নং- ৯৭)
নবিজী সাঃ আমাদের কে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। এখানে জীবন ও মরনের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য বলা হয়েছে। জীবনের ফিতনা হলো আমাদের চলার পথে শয়তানের প্ররোচনা। এই প্ররোচনার কারনে আমরা শয়তানের ফাদে পরে থাকি কু-কর্ম করে থাকি। নবিজী (সঃ) এই প্ররোচনা থেকেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন।

আর পরবর্তী দোয়াটা হলো মৃত্যুর ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য। 

মৃত্যুর ফিতনা হলো শয়তানের প্ররোচনা যখন সে বলবে “আমি তোমার আগেই মরে গেছি, আমি দেখলাম আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য নয় নবী সত্য দ্বীন নিয়ে আসেনি, ইসলাম সত্যি নয়” নাউযুবিল্লাহ।  এই সময় মানুষ প্রতারিত হতে পারে। 

কুফরি করতে পারে। আর তাই রসুল (সঃ) এর শেখানো দোয়া গুলো যদি আমরা নিয়মিত আমল করতে পারি তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ  এই ফেতনা থেকে বেঁচে থাকতে পারবো।

৬. মৃত্যুর ষষ্ঠ ও শেষ ধাপ

এই ধাপে মানুষের রুহ ত্বারাক্কীর উপর অবস্থান করে বের হওয়ার জন্য নাকে, মুখে অবস্থান করতে থাকে। এই সময় রুহ আজরাইল আঃ এর নিকট আত্মসমর্পনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। 

বান্দা যদি পাপিষ্ঠ হয় তখন আজরাইল আঃ বলতে থাকে হে পাপিষ্ঠ আত্মা, তুই বের হয়ে আয়া আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের দিকে, বের হয়ে আয জাহান্নাম ও প্রতিশোধ পরায়ন আল্লাহর দিকে।

এই কথা শোনার পরে পাপিষ্ঠ ব্যাক্তি চিৎকার দিয়ে বলে উঠবেঃ হে আমার পালন কর্তা আমাকে পুনরায় দুনিয়াতে প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করিনি। (সূরা মুমিনুন আয়াত নং- ৯৯-১০০)

অর্থাৎ তারা আফসোস করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার কথা হলোঃ কখনোই নয় এতো তার কথার কথা মাত্র। (সূরা মুমিনুন আয়াত নং- ১০০) 

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন তারা যদি আবার দুনিয়াতে আসে তারা কখনোই তা করবে না। আর তারা আবারও কুফরি করবে এবং নানা রকম পাপ কাজে লিপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা এই সব সম্পর্কে সর্বাধিক ভালো জানেন।

মৃত্যুর সময় নেককারঃ

নেককারের সামনে যখন মৃত্যু আসবে, যখন তার আত্মা প্রস্তুত হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তায়ালার ফেরাশতা হযরত আজরাইল আঃ তাকে সুসংবাদ দিবেন জান্নাতের। বদকারের রুহু যেমন কষ্টের সাথে বের করা হয়েছিলো নেককারের রুহু তেমনভাবে বের হবে না।

তাদের কে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হবে এবং বেশেস্তের খুশবু সহ রোমাল তাকে তার পুরুষ্কারের রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া হবে। বিস্তুারিত সহিহ হাদিসে বর্ননা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এমন মৃত্যু দান করুক। আমীন।

এগুলোতো গেল মৃত্যুর ধাপ। এখন আসুন মৃত্যু সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

মৃত্যু কি এবং কেন?

মৃত্যু হলো মানব জীবনসহ প্রত্যেক প্রাণীল শেষ অধ্যায়। অথবা জীবন নামের বইয়ের শেষ অধ্যায় এটি। সাধারণ ভাষায় মৃত্যু হলো একটি জীবনের শেষ অধ্যায় যার মাধ্যমে কোন প্রাণী দুনিয়ার জীবন শেষ করে থাকে!

কিন্তু এই শেষটা সবার জন্য সুন্দর হয় না। মৃত্যু এক এক জনের কাছে একেক রকম। মুমিনের জন্য মৃত্যু হলো “উপহার”। এর মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার রবের সাথে সাক্ষাত করে। 

আর যারা মুমিন নয় তাদের জন্য মৃত্যু হলো ধ্বংসের শুরু। যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তায়ালার আদেশ হুকুম ইত্যাদী অমান্য করেছে তাদের ধ্বংসের শুরু এখান থেকেই। তাদের আজাব চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত এবং এর কোন শেষ হবে না।

তবে আল্লাহ তায়ালা যাকে ক্ষমা করবেন তার জন্য পুরো কবরের জীবনটা হবে শান্তিময়। এর পরে কিয়ামতের ময়দানে তাকে পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাকে সমাবেত করবেন। এর পরে সে আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আর যারা আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা হতে বঞ্চিত হবে তারা আল্লাহর গজবে পতিত হবে। তাদের জন্য ধ্বংস আর ধ্বংস সারাজীবনের জন্য। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ 

আর তাদের বলা হবে তোমরা প্রবেশ কর (জাহান্নামর দরজা দিয়ে)। সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্য।  (সূরা যুমার আয়াত নং- ৩৯:৭২)

আল্লাহ তাদের জাহান্নামে চিরকাল শাস্তি দেবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দিক। আমীন।

মৃত্যু কি সহজ?

মৃত্যু কি সহজ? “হ্যা মুমিনদের জন্য মৃত্যু সহজ” আর কাফেরদের জন্য মৃত্যু অনেক কঠিন। কাফেরদের মৃত্যুর সময় আজাব হয়, শাস্তির ফেরেশতারা তার চারিদিকে দেখতে পায়। তখন তার জন্য সেটা একটা কঠিন পরিস্থিতি হয়ে দাড়ায়।

কিন্তু মুমিন ব্যাক্তির জন্য মৃত্যু একটি উপহার। সে সবসময় এই উপহার পেতে চায়। আর তাই মুমিন ব্যাক্তির দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ তেমন থাকে না। তারা আল্লাহ তায়ালার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। দুনিয়া থেকে তারাতারি বিদায় নিয়ে আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুত জান্নাতের দিকে পারি জমাতে চায়। তাই মৃত্যু হলো মুমিনদের জন্য উপহার।

কিন্তু কাফেরদের জন্য মৃত্যু সহজ নয়। কারন এরা দুনিয়াতে সর্বদা বিপর্যয় সৃষ্টি করে। নানান প্রকার পাপ কাজ, অকাজ, কুকর্ম এবং কুশিক্ষার প্রচলন করে যায়। আর কাফের বলতে শুধু বেধর্মীদের বোঝায় তা নয়। মুমিনদের অনেক ব্যক্তিও কাফের হয়ে যায় অনেক সময়।

তবে এই ক্ষেত্রে বোঝার বিষয়টি হলো এই যে, মানুষ কখন কাফের হয়? মানুষ কুফরী তথা অবিশ্বাসের মাধ্যমে কাফের হয়ে যায়। আবার অনেক ব্যাক্তি কাফের থেকে মুমিন হয় এবং আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত এর মাধ্যমে পুরুষকৃত হয়।

তবে কে কাফের কে মুমিন এইটা আপনি কখনোই বিচার করতে চেষ্টা করবেন না। এটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন ভালো ভালো মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য। কারন কিয়ামতের দিন আপনাদের বন্ধুদের সাথে এবং আপনার ইমামের সাথে আপনার বিচার হবে এক পর্যায়ে।

তো আমরা এই প্রশ্নের (মৃত্যু কি সহজ?) উত্তরে বোঝা গেল উত্তর হবে দুই রকমের। একটা আমরা যারা মুমিন আছি তাদের জন্য মৃত্যু হলো সহজ।

আর আমাদের মধ্যে যারা কাফের  তাদের জন্য মৃত্যু অনেক কঠিন। 

তবে এখানে আমরা মাপকাঠি হিসেবে মৃত্যুর সময়ের কষ্টকে বিবেচনা করবো না। কারন এমনও হতে পারে কারও মৃত্যুর সময় অনেক কষ্ট হলো আর এর বিনিময়ে তার মৃত্যুর পরবর্তীতে আজাব মাফ হয়ে গেল।

তবে মৃত্যু অবশ্যই একটি কঠিন বিষয়। আমাদের সবাইকে এই কঠিন মূহূর্তটি পার করে আসতে হবে। আর তাই এর প্রস্তুতি আমাদের সকলের থাকা উচিৎ।

মৃত্যুর মাধ্যমে শুরু হয় কবর এর জীবন বা আখিরাতের প্রথম ধাপ। আমরা প্রথম সময়ে রুহের জগতে ছিলাম। তার পরে মায়ের পেটের জগতে। এখন দুনিয়াই আছি। এর পরে মৃত্যুর জগত তার পরে কিয়ামত এবং এর পরে সর্বশেষ আমাদের চুড়ান্ত ফলাফল জান্নাত অথবা জাহান্নাম।

মৃত্যু সহজ অথবা কঠিন বিবেচনা করার ক্ষমতা আমাদের নেই তবে এইটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মুমিন ও কাফের দুইজনার জন্য আলাদা আলাদা স্বাদ হবে মৃত্যুর। তবে একজন মানুষ হিসেবে মৃত্যুকে ভয় করা উচিৎ না। কারন এটা নিশ্চিত যে আমাদের মৃত্যু হবে কিন্তু অনিশ্চিত কখন হবে। 

মৃত্যুর পর প্রণীদের কি হয়?

মৃত্যুর পরে প্রাণীদের কি হয় তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কারন মৃত্যুর পরে আবার কেউ উঠে এসে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে পারে না। আর তাই আমাদের সমাজে এই নিয়ে নানান বিভ্রান্তি রয়েছে আমাদের সমাজে। আসলে সঠিকভাবে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না।

তবে মৃত্যুর পরে মুমিনদের কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির ঘুম এবং পাপিষ্ঠদের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত শাস্তি পেতে থাকবে। 

শেষ কথা

“মৃত্যুর  সময় কি হয়” মৃত্যু নিয়ে এমন হাজারো কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। আসলে কোনটি ঠিক এবং কোনটি ঠিক আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি নানান কুচক্রি জাল কথা বার্তার ভিরে। তাই বেদ’আত সহজে আমাদের মনে বাসা বাধে এবং মৃত্যুর আগে ১২ টি সংকেত, মৃত্যু কি এবং কেন, মৃত্যুর পর প্রাণীদের কি হয় এবং মৃত্যুর লক্ষণ কি কি এমন হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনে উঁকি দেয়। আমি চেষ্টা করেছি যথাসম্ভব রেফারেন্স সহ আপনাদের সামনে সত্যটি উপস্তাপন করতে। এর পর থেকে মৃত্যু সম্পর্কিত এবং ইসলামের অন্যান্য যে কোন বিষয় জানার জন্য কোরআন ও হাদিসের রেফারেন্স এর উপর নির্ভর করবেন।

আরও পড়ুন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

google console - How to work in this feature?

মুমিন ব্যাক্তির তিনটি রোগ যা জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেই। যে তিনটি রোগ আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। Islamic Study Bangla.

Watch YouTube videos without ads. BlogSpot Help Bangla.