মুমিন ব্যাক্তির তিনটি রোগ যা জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেই। যে তিনটি রোগ আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। Islamic Study Bangla.

রোগ ও আল্লাহ তায়ালার একটি নিয়ামত হতে পারে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে এইবার বিশ্বাস হবে। এমন তিনটি রোগ আছে যা মুমিন মুসলমানকে আক্রান্ত করলে তার জান্নাতে যাওয়ার পত সুগম হবে। অর্থাৎ সে যে জান্নাতি তা বোঝা যাবে। 

আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই। অনেক সময় সেই সকল রোগের কারনে আমাদের শারীরিক, মানসিক শান্তি চলে যাই, রাতের পর রাত ঘুম হারাম হয়ে যায়। কিন্তু সুসংবাদ হলো মুমিন মুসলমানদের জন্য। কারন মুমিন ব্যাক্তির রোগ হলো তার গোনাহ এর কাফফারা। এই গুনাহ হতে পারে আমাদের ক্ষমার অসিলা। উল্লেখ্য মানুষের উপর আসা সকল বিপদ-ই তার কর্মের ফল দায়ি।


মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এরশাদ করেছেন,

যে ব্যক্তি অস্বুস্থ অবস্থায় ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে একটি রাত অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন।

আর তাই আমাদের উচিৎ রোগে আক্রন্ত হলে,  ধৈর্য্য না হারানো। বরং আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস রাখা। এবং আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের উত্তম প্রতিদান দেন। এই জন্য একজন ‍মুমিনের উচিৎ কোন বিপদ-আপদে পরলে তাতে ধৈর্য্য ধারন করা এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া।

রাসুল (সঃ) আরো বলেছেন,

দোজখি লোক দেখার যাদের ইচ্ছে আছে, তাদের বলো যার কোন দিন রোগ হয়নি তাকে যেন দেখে। 

অর্থাৎ এর থেকেই বোঝা যায় যে, রোগ আল্লাহতায়ালার একটি বিশাল নিয়াতম। এবং এই হাদিস দ্বারা একজন বিশেষ ব্যাক্তিকেও বোঝানো হয়েছে যে, মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু আগে পর্যন্ত কোন দিন একবারও রোগে অসুস্থ হয়নি।

(বিদ্রঃ সুস্থতাও আল্লাহতায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত। এখানে মুমিনের রোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাই এ বিষয়ের রেফারেন্স উল্লেখ্য করা হয়েছে। কেউ ভুল বুঝবেন নাহ।)

আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনের মধ্যে কিছু কিছু সময় রোগ,শোক ইত্যাদী দিয়ে পরীক্ষা করেন এবং এর মাধ্যমে মানুষের গুনাহগুলোকে মাফ করে দেন।

মহানবী হযরত ‍মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, নিশ্চয় কোন মুমিনের যে রোগ হয় তার বিনিময় আল্লাহ তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেন। (সুবাহান আল্লাহ)

এবার আসুন জেনে নিই কোন তিনটি রোগ। এই রোগ গুলো সচারচর আমাদের হয়ে থাকে এবং হাদিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা গেছে যে,এগুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অভিশাপ নয় বরং নিয়ামত। 

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নিয়ামত স্বরুপ রোগগুলো হলোঃ

  • সর্দি জ্বর
  • চুলকানি
  • চোখ ওঠা
সর্দি জ্বর
আমরা অধিকাংশরাই এই রোগে ভুগে থাকি এবং বলতে গেলে সবাই এই রোগে পরেছি। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এই সর্দি জ্বরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামিন মানুষের শরীর থেকে জীবানু বের করে দেন। যার সর্দি হবে সে কোনো দিন পাগল হবে না। (সুবাহান আল্লাহ)

চুলকানি
অনেকে এই রোগীকে ঘৃনাও করে থাকে। চুলকানিত প্রায় দেশের অনেক মানুষই ভুগে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ধুলাবালির পলুশন থেকে এই রোগ হয়। হাদিসে এসেছে, যার শরীর জুরে কম বেশি চুলকানি থাকবে সে কোন দিন কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হবে না এবং শ্বেত রোগও হবে না। তাই আমদের উচিৎ হবে এই সকল রোগে আক্রান্ত হলে ভয় না পাওয়া এবং ধৈর্য্য ধারন করে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা।

চোখ ওঠা
আমরা চোখ উঠলে অনেক ভয় পেয়ে যাই। তবে এর কোন ভয়ের কারন নাই। কারন চোখ ওঠা একটি নিয়ামত। হাদিস অনুযায়ী যার চোখ ওঠা রোগ হয় সে কোনদিন অন্ধ হবে না। (সুবাহান আল্লাহ।) তাই আমাদের বিচলিত হওয়া বা ভয়ের কোন কারন নাই। এই রোগে যদি আমরা আক্রান্ত হয় তবে নিশ্চিন্ত থাকতে হবে এবং ধৈর্য্যধারন করে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।

রাসুল (সঃ) বলেন তোমাদের যখনই কোন রোগ আক্রমন হয় তোমরা সাথে সাথেই আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর পাশা পাশি চিকিৎসা, সেবা গ্রহন করো।

সুতরাং আমাদের রোগে শোকে আল্লাহর সাহায্য চাইবো এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহন করবো। কারন চিকিৎসা সেবা গ্রহন করা সুন্নতের অংশ।

মহানবী (সঃ) রোগ, শোক কে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। কারন আল্লাহতায়ালার নবী,হযরত আইয়ুব আঃ ১২ বছর কঠিন দুরারোগ্য বেধিতে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনদিন আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যান নি। তিনি ছিলেন একটি সম্রাজ্যের সম্রাট। 
তার শরীরে এতো বেশি পরিমানে কুষ্ঠ রোগ ও পচন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন যে, তার শরীরে পোকা মাকর আক্রমন শুরু করে।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে আবার স্বুস্থতা দান করেন।

তিনি যখন স্বুস্থ হয়ে গেলেন তার পরে একদিন তিনি তার মসনদে বসে ছিলেন। তখন তার এক বয়োজৈষ্ঠ প্রজা জিজ্ঞাসা করে হে আয়্যুব তোমার কি সেই রোগ আর কষ্টের কথা মনে হয়? তখন আয়্যুব আঃ বলেছিলেনঃ হ্যা তখনকার দিনগুলো এখনকার সময়ের চেয়েও শ্রেষ্ট ছিলো। এই কথা শুনে সভাষদের অনেকেই বলেন হ্যা আয়্যুব আপনি কি আমাদের সাথে মষ্করা করছেন? আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কঠিন দূরারোগ্য থেকে মুক্তি দিয়ে কষ্টের জীবন থেকে প্রশান্তির জীবন দান করে আজ আবার পুনরায় রাজ্যের শ্বাসন ভার দিয়েছেন আর আপনি বলছেন তখনকার জীবন শ্রেষ্ট ছিলো? তখন আয়্যুব আঃ বললেন হ্যা তখনকার জীবন শ্রেষ্ট ছিলো কারন তখন প্রতিবার আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি মুখ দিয়ে আমার কলবে জিজ্ঞাসা করতো হে আয়্যুব তুমি কেমন  আছো? আল্লাহুআকবার সেই জীবন আমার কাছে এতো প্রশান্তির ছিলো যা এই রাজ্য ১২ বছর শ্বাসন করেও পাবো না।

কিছু হাদিস
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
#১ মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে একটি রাত অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন।
সুতরাং রোগমুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
অর্থাৎ অসুস্থতাও আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত
#২ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেছেন, ‘দোজখি লোক দেখার যাদের ইচ্ছা থাকে, তাদের বলো, যার কোনো দিন রোগ হয়নি তাকে যেন দেখে।’ অসুস্থতা মুমিন হওয়ার নিয়ামত,
#একবার রাসুল (সাঃ) বসে ছিলেন তার পাশে অনেক সাহাবি বসা একজন বলল । হে আল্লাহর রাসুল আল্লাহ ফজলে আমার কখনো অসুখ বিসুখ হয় না , তখন মহানবী (সা.) এরশাদ করেন উঠে দারাও তুমি , তুমি আমার উম্মতের অন্তরভুক্ত নও (আবু দাউদ )
অপর হাদিসে এসেছে ,মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় কোন মুমিনের যে রোগ হয় তার বিনিময় আল্লাহ তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেন

তার মানে রোগ / অসুখ বিসুখ হল মুমিন আল্লাহর বান্দার লক্ষন ।

#৩ রাসূল (সা.) একবার তার জ্বরে আক্রান্ত এক অসুস্থ সাহাবীকে দেখতে গিয়ে বলেন,
উম্মে সায়েব জ্বরে কাঁতরাতে থাকলে রাসূল (সা.) তাকে প্রশ্ন করেন তার সমস্যা সম্পর্কে। তখন তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমার প্রচন্ড জ্বর হয়েছে। আল্লাহ একে অভিশপ্ত করুন।’ রাসূল (সা.) তখন বলেন,
""জ্বরকে গালি দিও না কেননা এটা আদম সন্তানের গুনাহ সমুহ এমন ভাবে দূর করে দেয় যেমন ভাবে কামার লোহার জং লোহা হতে পরিস্কার করে ফেলে। (সহিহ মুসলিম)
#৪ রাসূল (সা.) অসুস্থতা সম্পর্কে অপর বর্ণনায় বলেছেন, অসুস্থতা গুনাহকে এমনভাবে ঝরিয়ে মুক্ত করে, যেভাবে শীতে গাছের পাতা ঝরে যায়।
মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় মুমিনের এক রাত্রি জ্বর তার সকল গুনাহ সমুহ কে দূর করে দেয় (তাগরিব তারগিব )
#মুমিনের জন্য সকল প্রকার অসুস্থতা ও বিপদকে তার গুনাহ থেকে মুক্তির উপকরণ হিসেবে রাসূল (সা.) বর্ণনা করেছেন। এমনকি পায়ে যদি ছোট একটি কাঁটাও বিঁধে,

#৫ যে বেক্তি রোগে পতিত হয় না তার ঈমান পবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়,
মহানবী (সা.) বলেন "ঐ মুমিনের প্রতি আমি আশ্চর্য হই , যে রোগের কারনে অধৈয্য হয় , যদি সে জানত যে রোগের মধ্যে কত উপকার আছে তাহলে সে আল্লাহ সঙ্গে মিলিত না হওয়া র্যন্ত রোগাক্রান্ত থাকাই পছন্দ করতো - বাযযার
#৬ অনেকে ভাবে রোগকান্ত হলে হয়ত ইবাদত কম হয় নেকি কম হয় কিন্তু উপরে ত দেখলাম কিভাবে গুনাহ দূর হয় , এই বার আরাকটা সু সংবাদ, রোগির জন্য
অসুস্থ বা সফরে থাকলে সে সম পরিমান নেকি পেয়ে যাবে । আর রোগের সোওয়াব অন্য প্রতিদান ত আছেই ।
"আল্লাহ কোন বান্দা যখন অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে তখন তার আমল নামায় সেই পরিমান নেকি লেখা হয় যা সে সুস্থ বা মুকিম অবস্থায় করতো (সহিহ বুখারি) (আবু দাউদ হাদিস নং- ৩০৭০ ) সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

google console - How to work in this feature?

Watch YouTube videos without ads. BlogSpot Help Bangla.