ইসলামে চারটি প্রাণী হত্যা করা নিষেধ এবং কেনো নিষেধ বিস্তারিত জানুন। Islamic study bangla.

সূচনাঃ কেনো এগুলো হত্যা করা নিষেধ?

প্রতিটি প্রানীই কোন না কোন উদ্দ্যেশে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। তাদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা। প্রত্যেক প্রজাতির প্রাণী অন্য এক প্রাণীর চেয়ে আলাদা। এদের অনেকেরই উপকার আমরা প্রায় প্রতিদিন পেয়ে থাকি। এদের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা এদের উপকারিতা প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করতে পারি।  

তবে যাদেরকে দেখে আমাদের মনে হয় যে এরা সমাজের জন্য অপকারী বা তাদের কোন প্রয়োজন নেই তাদেরও প্রয়োজনীয়তা আছে। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে কাক। কাককে অনেকে অশুভ চিন্তা করে এবং অনেক আগে এদেরকে শুধু অকল্যানের দূত হিসেবে দেখত। কিন্তু এদের উপকারিতা হলো এরা পরিবেশের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে।

এমন সচেতন মূলক দৃষ্টিতে দেখলে অনেক প্রাণীর ভালো দিকগুলো বেরিয়ে আসবে এবং এমনও অনেক প্রাণী আছে যাদের উপকারীতা বা তাদের বিশেষ গুন অথবা তাদের সৃষ্টির কারনগুলো বের করা যায়নি। আবার এমন কিছু প্রাণী আছে যা আল্লাহর রাসুল (সঃ) তাদের কে হত্যা করতে নিষধ করেছেন।

এমনটা নয় যে এগুলো আল্লাহ তায়ালার তাসবিহ পাঠ করে বলে তাদেরকে হত্যা করা নিষেধ। বরং এগুলো আমাদের পরিবেশের জন্যও অনেক উপকারী। ইসলামে এজন্য এগুলোকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে আস্তে আস্তে সব তথ্য জানা যাচ্ছে কিন্তু ইসলামে এগুলো এসেছে ১৪০০ বছর আগে।

ইবনে আব্বাস রাঃ বলেনঃ

”নবী (সাঃ) চার প্রকার প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, পিঁপড়া, মৌমাছি, হুদহুদ পাখি এবং চড়ুই সদৃশ্য বাজ পাখি।”

(আবু দাউদ, হাদিস: ৫২৬৭)

 

আজকে আলোচনা করবো ইসলামে যেই চারটি প্রাণী হত্যা করা নিষিদ্ধ সেই প্রাণীগুলোর ব্যাপারে ব্যাপারে।

যেই চারটি প্রাণী ইসলামে হত্যা করা নিষিদ্ধ আছেঃ

  • ব্যাঙ
  • পিপড়া
  • মৌমাছি
  • হুদহুদ পাখি

ব্যাঙঃ

ব্যাঙ হত্যা করা নিষেধ। ব্যাঙ বিভিন্ন আকৃতি প্রকৃতির হয়ে থাকে। ব্যাঙ এর তেমন কোন অপকারিতা নেই। এমনকি জ্ঞান বিজ্ঞান উন্নতি হওয়ার পরে আমরা শুধু এর উপকারই খুজে পাচ্ছি। যেমনঃ

ব্যাঙের মাধ্যমে যেই উপকার গুলো আমরা পাইঃ

1.      এটি প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষা করে।

2.      জমির উর্বরতা বারায়।

3.      ফসলের পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলে ফলে ফসলের সুরক্ষতা বাড়ে।

4.      ব্যাঙ যেহেতু পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলে তাই জমিতে বেশি কীটনাশক দেওয়া লাগেনা।

5.      যেহেতু কীটনাশক দেওয়া লাগেনা তাই উর্বরতাও নষ্ট হয় না।

6.      এরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও দিয়ে থাকে।

ব্যাঙ যেভাবে আমাদের প্রাণ শংশয় থেকে বাঁচায়ঃ

কোন বিজ্ঞানির কোন আবিষ্কার এই পূর্বাভাস দিতে না পারলেও ব্যাঙ ঠিকই পূর্বাভাস দিতে পারে। ব্যাঙ এমন স্থানে দাড়িয়ে থাকে যেখান দিয়ে সাপ আসতে পারে। তাই আমাদের উচিৎ ব্যাঙকে কোন জায়গায় দেখে তাকে লাথি মারা বা পাদিয়ে পিষে না ফেলে সতর্ক হয়ে যাওয়া।

আসুন পাঁচওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করি।

যখনি সাপ লোকালয়ের দিকে আসতে থাকে তখনই ব্যাঙ পাহারাদার হিসেবে সেখানে দাড়িয়ে থাকে যাতে মানুষের কোন ক্ষতি না হয়। যখন সাপ আসে তখন ব্যাঙ তার নিজের শরীর থেকে তিন-চার গুন বৃদ্ধি করে এবং এক ধরনের দুর্গন্ধ বের করে যার কারনে সাপ রাস্তা পরিবর্তন করে অন্য রাস্তায় চলে যায়। এতে করে মানুষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

এমনকি অনেক সময় ব্যাঙ নিজে সাপের খাওয়ার হয়ে যায় এবং মানুষকে সাপের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। এই কারনে হলেও আমাদের উচিৎ ব্যাঙকে অকারনে না মারা।

আরও পড়ুনঃ


ইসলামে ব্যাঙ এর সাহায্যঃ

আমাদের ব্যাঙের সম্পর্কে আরো একটি কথা জানা আছে। আর তা হলো ইব্রাহীম আঃ কে অগ্নীকান্ডে নিক্ষেপ করার পরে ব্যাঙ সাহায্য করেছিলো। সে আগুনের উপর পস্রাব করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলো।

তার সাহায্য কোন কাজে আসেনি ঠিকই কিন্তু ব্যাঙ দেখাতে চেয়েছে যে, সে নমরুদের পক্ষে নয় সে আল্লাহ তায়ালার পক্ষে। আল্লাহুআকবার।

এই জন্য ব্যাঙের পস্রাবকে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ঘোষনা করেছেন।

আল্লাহ যাকে সম্মান দিয়েছে তার সম্মান কেউ কাড়তে পারবে না

পিপড়াঃ

পিপড়া মানুষের আগে থেকে পৃথীবিতে অবস্থানরত আছে। সেই ডাইনাসরের যুগ থেকে এখনো বেঁচে আছে । পিঁপড়া একটি বুদ্ধিমান প্রানিও বটে যার জন্য এখনো তাঁরা বিলুপ্ত হয়নি।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, পিপড়ারাও আল্লাহর তাসবিহ পড়ে। তারাও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

পিপড়া সম্পর্কৃত হাদিস

রাসুল সাঃ বলেনঃ

” নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেশতারা এবং আসমান জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিপড়া এবং পানির মাছ পর্য্ন্ত সেই ব্যাক্তির জন্য দোয় করে যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। (তিরমিজি “

অহেতুক পিপড়াদের হত্যা করা উচিৎ নয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ”রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোন এক নবীকে একটি পিঁপড়া দংশন করলে তিনি সে পিঁপড়ার বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

তখন আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ওহি প্রেরণ করে বলেন, তোমাকে তো একটি পিঁপড়া দংশন করেছে আর তুমি এমন এক জাতিকে ধ্বংস করলে যারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করত। (নাসায়ি)”

এর থেকে এটা প্রমাণীত হয় যে, পিঁপড়া আল্লাহ তায়ালার তসবিহ পাঠ করে।

তবে পিঁপড়া ক্ষতি করলে তাকে তারানোর ব্যাবস্থাও করা যেতে পারে। যদি খাদ্যবস্তু ঠিক মতো ঢেকে রাখলে পিঁপড়ার আক্রমন থেকে বাঁচা যায়।

আরও পড়ুনঃ মৃত্যুর সময় মানুষের কি হয়? মৃত্যুর লক্ষন কি কি?

মৌমাছিঃ

মৌমাছি একটি উপকারী প্রাণী। এরা আমাদের জন্য উতকৃষ্ট মধু আহরণ করে। মৌমাছির আরবি হলো নাহল। পবিত্র কুর্‌আনে নাহল নামে একটি সূরা অবতির্ন হয়েছে।

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মধু খেতে ভালোবাসতেন।

মৌমাছি একটি পরিশ্রমী প্রানি। একফোটা মধু তৈরি করতে যে শ্রম ও সময় ব্যায় হয় তা বিষ্ময়কর! এরা ফুলের রস মুখে নিয়ে সেটা থকে জলীয় অংশ দূর করে শতভাগ ভেজালমুক্ত মধু তৈরি করে।

মৌমাছির বিষ্ময়কর শ্রমঃ

এক পাউন্ড মধু বানাতে ৫৫০ মৌমাছিকে প্রায় ২০ লাখ ফুলে ভ্রমন করতে হয়। আবার এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে একটি কর্মী মৌমাছিকে প্রায় ১৪.৫ লক্ষ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয় যা দিয়ে পৃথিবীকে তিনবার প্রদক্ষিন করা যায়।

পৃথিবীতে যত রকমের চাষ মানুষ করে থাকে তার ৭০ শতাংশ নির্ভর করে মৌমাছির উপর। যদি মৌমাছি ফুলে ফুলে উড়ে মধু আহরণ না করে, তাহলে তাদের গায়ে ফুলের পরাগরেণু লাগবেনা এবং  পরাগায়ণ পক্রিয়াটি বাধাগ্রস্থ হয়ে যাবে। এর ফলে অতি দ্রুত পৃথিবীতে গাছের অস্তিত্ব আর থাকবে না।

 আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন মৌমাছি যদি না থাকে, তাহলে মানুষ নিশ্চিহ্ন হতে সময় লাগবে চার বছর।

হুদহুদ পাখিঃ

হুদহুদ পাখি হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এই পাখিকে কাঠকুড়ালি বা মোহনচুরাও বলা হয়। হুদহুদ পাখির অনেক জাতি উপজাতি আছে তাই মোহনচুরাই হযরত সুলাইমান (আঃ) এর হুদহুদ পাখি কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।

আল-কোরআনে বর্ণিত আছে যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) এর চিঠি আদান-প্রদান করতো হুদহুদ পাখি।

হুদহুদ পাখি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে দেখা যায়। ভারতেও একে দেখা যায়।

 

বর্ণনাঃ

পাখিটির শরীর বাদামি এবং ডানা ও লেজে সাদা-কালো দাগ রয়েছে। এদের মাথায় ঝুটি দেখা যায়। এরা ক্ষতিকর পোকা-মাকর খেয়ে ফেলে। অনেক দেশে আইন করে হুদহুদ পাখিকে সংরক্ষন করা হয়।

আমরা এগুলোকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবো। এমনকি কোন প্রাণীকেই অকারনে হত্যা করবো না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

জামাতে সালাত আদায় করলে ২৭ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

google console - How to work in this feature?

মুমিন ব্যাক্তির তিনটি রোগ যা জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেই। যে তিনটি রোগ আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। Islamic Study Bangla.

Watch YouTube videos without ads. BlogSpot Help Bangla.