মসজিদের দায়িত্ব কারা পালন করবে? (তাফসীরে মাযহারী এর আলোকে)
মসজিদের দায়িত্ব কারা পালন করবে?
মুসলিম ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনে সকল সমস্যার সমাধান দেওয়া আছে। অনেকে প্রায় সময় বলে থাকেন যে ধর্ম ধর্মের জায়গায় এবং অন্যান্য বিষয়গুলো তাদের জায়গায়। তারা আসলে মন থেকে বিশ্বাস করতে পারে না যে ইসলাম শুধু মাত্র একটা ধর্ম নয় বরং পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনে মসজিদের দায়িত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য আছে; যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। মসজিদের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কিছু তথ্য দিয়ে রেখেছেন। সূরা তওবা তে বলা হয়েছে
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ
মসজিদের দায়িত্ব পালন করবে কারা?
নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। [সুরা তাওবা - ৯:১৮]
এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছেঃ
- যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে
- যারা শেষ (তথা কিয়ামত) দিনকে বিশ্বাস করে
- যারা সালাত কায়েম তথা প্রতিষ্ঠিত করে
- যাকাত আদায় করে তথা নিজ সম্পদকে পবিত্র করে
- এবং সর্বশেষ আল্লাহ ব্যাতিত কাউকে ভয় করে না।
এই ৫ টি বিষয় উল্লেখ করার পরে বলা হয়েছে -
”তাদের হেদায়াত সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া যায়।”
মূলত এই ৫ টি বিষয় প্রত্যেক মুসলিমের মাঝে থাকা অত্যাবশ। এবং এমন মুসলিমদের মাঝ থেকেই মসজিদের দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে বা তারাই দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার হকদার।
প্রথমত, অবশ্যই ঈমান থাকতেই হবে। যারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণাঙ্গ ঈমান রাখে এবং
দিত্বীয়ত, যারা শেষ দিনকে বিশ্বাস করে।
শেষ দিবসে বিশ্বাস বলতে কি বুঝায়?
শেষ দিবসে বিশ্বাস মানে শুধু এইটা বিশ্বাস করা না যে একদিন কিয়ামত হবে। বরং অনেক বে ধর্মী ভাই বনেরাও এটা বিশ্বাস করে যে একদিন সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে তাদের বিশ্বাস আর আমাদের বিশ্বাস কি এক হয়ে গেল না?
বরং শেষ দিনকে বিশ্বাস করা বলতে বোঝায় হিসাব দিবস যেই দিন প্রত্যেককে তার হক যথাযথ ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আর যে শেষ দিবসে বিশ্বাস করে সে প্রতিনিয়তই তার থেকে আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে। ফলস্রুতিতে তারা পাপ কাজ ভয় পাই, নফসের উপর জুলুম করে না এবং বান্দার হক নষ্ট করে না। তারা এগুলো করার সাথে সাথেই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
তৃতীয়ত, যারা সমাজে সালাত প্রতিষ্ঠা করে তারা মসজিদের দ্বায়িত্বে থাকবে। যারা সালাত প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে মসজিদের দায়িত্বে থাকবে।
চতুর্থত, যারা আল্লাহকে ভয় করে যাকাত আদায় করে এবং নিজ সম্পদকে পবিত্র করে তাঁরা মসজিদের দায়িত্বে থাকতে পারবে।
যাকাত বলতে কি বুঝায়?
যাকাত বলতে শুধু লোক দেখানো লুঙ্গি, শাড়ী প্রদান করে থাকে এতের যাকাত আদায় হয় কি না হলেও কতটুকো আদায় হয় তার নিশ্চয়তা নাই।
পঞ্চমত, মসিজদ তারা আবাদ করবে যারা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে ভয় করে না। আল্লাহ তায়ালা ব্যাতিত অন্য কাউকে ভয় করা যায়েজ নাই। বিশেষ করে যারা দুনিয়াতে দ্বীনি কাজ কর্মের আনজাম দিয়ে থাকে ব্যবস্থা করে থাকে তারা আল্লাহ ব্যাতিত আর কাউকে ভয় করবে না।
সাধারণত হারাম কে হারাম আর হালাল কে হালাল বলার সাহস থাকে না। আর তাই হারামকে হালাল আর হারামকে হালাল বানিয়ে দেয় অনেকে। কিন্তু এটা একদম ঠিক না। এটা এক প্রকার শির্ক। তাই যারা মসজিদের দায়িত্বে থাকবে তাদের মনে আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো ভয় থাকবে না।
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার আরেকটি ব্যাখা হলো গোপনে ও প্রকাশ্যে সব সময় আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা। আল্লাহকে যে ভয় করে, সে যেমন প্রকাশ্যে কোন খারাপ কাজ করতে পারবে না আবার সে গোপনেও কারো কোন ক্ষতি করবে না। কোন গোনাহের কাজ করবে না এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলবে।
শেষ কথা
সর্বপরি সূরা তওবার আয়াত নং- ১৮ অনুযায়ী মসজিদ সহ সকল দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে যারা দ্বায়িত্বে এবং নেতৃত্বে থাকবে তারা এই পাঁচটি উপদেশ মেনে চলবে। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সবারই এই উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে। শুধুমাত্র একজন পরিপূর্ণ মুসলিম মসজিদ আবাদ করতে পারবে।
(তাফসীরে মাযহারী এর আলোকে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন